শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৭

জিজীবিষা

       

নিখিলেশের মতো কোন ভাল বন্ধু আমার কখনওই হয়নি
যার সাথে আমি আমার জীবন বদল করতে পারি।
আজ থেকে বহু বছর আগে ধারণ করা সেই জীবনটা
আমি অদ্যাবধি বয়ে বেরাচ্ছি!
প্রিয় সুনীল,আমি আপনার মতো মানুষের পায়ের কাছে
কুকুর হয়ে বসে তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখতে চাইনি।
ছারপোকা হয়ে হাঁটিনি ছারপোকার পাশে;
মশা হয়ে কখনোই উড়তে সাধ হয়নি মশার সঙ্গে।
আমি নারী! তাই অন্ধকারে দেশলাই জ্বেলে
নিজের ভেতরে ডুব দিয়ে খুঁজতে হয়নি অন্যের আবাসন।
কেনোনা আমি জানি -আমি নদীর মতো।
এখানে ভেসে বেড়ানো যায়,যায় মন চাইলে দেয়া ডুবসাঁতার।
শুধু যায়না বানানো আবাসস্থল।

আমি স্বজ্ঞানে প্রতিদিন যাপন করেছি নানা জীবন,
মানুষ হয়েই মানুষের ভেতরের কুকুরটাকে দেখেছি অনায়াসে ;
পুরুষের স্বানিধ্যে এসেছি জেনেছি
প্রেম পুরুষালী হয় মেয়েলী হয় শুধু হয়না মানবীয়।
আমি কর্পূরের মতো উড়ে যেতে দেখেছি বেঁচে থাকার স্বপ্ন !
আপনি একে কী বলবেন সুনীল ?
আমি যীশুর কষ্ট বুঝতে নিজের হাতে পেরেক বিঁধিনি  
কিন্তু আমার শীরতন্তু বেয়ে প্রতিনিয়ত ঝরেছে রক্ত চুইয়ে চুইয়ে ;
আমি ফুলকে ভালবেসেছি ফুল হয়ে
পিতামহের নাম আমি বয়ে বেড়াচ্ছি সহস্র মাস,
মৃত্যুকে প্রিয় মুখ ভেবে-তার আলিঙ্গনে হতে চাই নাশ।
পরিচিত সেই জীবন দীর্ঘ সময় পেরিয়ে অপরিচিতই রয়ে গেছে।
অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি আর।
যুগ যুগ ধরে আমাদের এভাবেই বেঁচে থাকতে হয়;
আমরা কারো সাথেই জীবন বদল করতে পারিনা,
গভীর রাতে সঙ্গমনিরত দম্পতি কী জানে মানুষের জন্ম চক্র?
আপনি কার কাছে জন্ম ভিক্ষা চাইবেন?
যারা অন্ধকারে সঙ্গমের ভিক্ষা মেগে ফেরে?

প্রিয় সুনীল,মানুষ এই রকম ভাবেই বেঁচে থাকে।
প্রিয় বন্ধু আমাদের অনুভূতিকেই ধারণ করতে পারে না;
কী করে আমার বদল করা জীবন সে ধারণ করবে?
প্রতিটি মানুষ এখানে ছায়ার নিগড়ে বন্দি
মানুষরূপী মনুষ্যত্বহীন মানুষেরাই আজ সব চেয়ে সুখী।
ক্রমশ চারিপাশ ঘিরে ধরছে মানুষখেকো ছায়া মানুষেরা।
আর তাই এখন জীবন বদল করতে নয় ; চাই ছায়ার নিগড় থেকে মুক্তি।


শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৭

অন্য আমি


তুমি আর আমি দুজন মিলে
'আমরা' হয়েছি যবে
মিশে দুজনায় এক হয়ে গেছি
অতীত হয়েছে সবে।

করেছি সৃজন নতুন ভুবন
পূজ্য সেখানে প্রেম
আমাদের প্রেমে আমরাই আজ
হৃদয়ে গড়েছি হেম।

আমি তোমাতে তুমি আমাতে
মিশেছি এমনি সুখে
জগতের সব রিপু আর ক্ষোভ
তাই দেখে ভাসে দুখে।

পরস্পর কে ভালবেসে মোরা
হয়েছি দুজনে শুদ্ধ
জীবন মরন সব কিছুকেই
প্রেমেতে করেছি রুদ্ধ।

নিজেদের ক্ষতি রচনা করেছি
পরস্পরের টানে
বসূধার সব নিয়মনীতি
উড়ে গেছে প্রেম বাণে।

ধরণীর সব লোভ আর পাপ
পথ রুধিয়াছে যখনি
আমাদের প্রেম দেখিয়েছে আলো
ভেঙেছি রুদ্ধ বাঁধুনি।

আমার মাঝেতে অন্য আমি
তোমাকেই আমি জেনেছি,
তুমিও আমাকে একি প্রেমে বাঁধো
মনে মনে তাই মেনেছি।

শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭

বৃষ্টি স্নাত

যখন আমার মন আকাশে মেঘ করেছে বেশ?
আমি ভাবলাম ঝড়িয়ে বৃষ্টি কাটাই মেঘের রেষ।
তখন একটা প্রবল বৃষ্টি ঝড়াই আমার মনে
মনের সকল মেঘ গুলোকে ভেজাই বৃষ্টি স্নানে।
ঝুম ঝুমা ঝুম বৃষ্টি ঝড়ে রক্তে যাচ্ছে মিশে
জীবনের সব গ্লানি গুলো আজ বৃষ্টিতে যাক ভেসে।
বৃষ্টি ঝড়ে বৃষ্টি ঝরে যাক ঝরে যাক বৃষ্টি
বৃষ্টি ভেজা মনেই আমি স্বপ্ন করবো সৃষ্টি।
বৃষ্টির সেই ধারাপাতকে ভেবে গানের সুর
মন খুশিতে বেড়িয়ে চলে রঙিন স্বপ্নপুর।
ঝরছে বৃষ্টি ঝরেই চলছে ভিজিয়ে মনের অলিগলি
জীবনের সব হাসি কান্নাকে বৃষ্টি ভেবেই চলি।
ভিতর বাহির জুড়ে বয়ে যায় হৃদয়ের সেই ধারাজল
বৃষ্টিকে আমি খুব ভালবাসি হোক না সে যত গড়ল।
সময় করে আমার হৃদয়ে ঘুরে যেও এসে শ্রাবণে
ভালবাসার বৃষ্টি ধারায় ভেজাবো তোমায় যতনে।
অন্তরে মোর মেঘ করেছে তোমায় মনে করে;
প্রচণ্ড এক বৃষ্টি আমার মনের ভেতর ঝড়ে।



বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৭

অদিতি

আমি দিনকে দেখেছি আমারি মধ্যে আমারি মধ্যে দেখেছি রাত।
আমারি মধ্যে ডুবেছে সূর্য আমারি মধ্যে হয়েছে প্রাত।
আমি মহাকাল আমি বিস্ময় এরোসের শত যাতনা
আমি কামিনী আমিই মোহিনী সৃষ্টি লুপ্তের রচনা।
অমাবস্যা পূর্ণিমাতে এই আমারি মাঝে
হয়েছে জোয়ার হয়েছে ভাটা সকাল কিংবা সাঝে।
শ্রাবণে যেমন উত্তাল নদে আছড়ে পড়ে ঢেউ
আমাকেই আমি বেঁধেছি আমাতে জানেনাই তা কেউ।
বৈশাখেরি তপ্ত দহনে যতবার পোড়ে ধরণী?
একি সে দাহনে আমিও পুরেছি রেখে সাক্ষী অবনী।
আমিই হয়েছি আষাঢ়ে কদম বোশেখে কৃষ্ণচূড়া
আমারি মধ্যে শুনেছি মন্ত্র শুনেছ পবিত্র সুরা।
তুলসী তলায় প্রদীপ হয়েছি মাজারে আগরবাতি
আমি কিন্তু গির্জাতে গিয়ে হয়েছি মোমের বাতি।
শরতের নীল স্বচ্ছ আকাশে হয়ে নবমীর চাঁদ
আলো হয়ে ঝরে নিজেই নিজের পূর্ণ করেছি সাধ।
বৃষ্টি স্নাত স্নিগ্ধ আকাশে রংধনু হয়ে সেজেছি
শ্মশানের কালো ছাই হয়ে আমি ভগ্নস্তূপে উড়েছি।
শীতের সকালে শ্যামল ঘাসেতে হয়েছি শিশির বিন্দু,
আমিই আবার সমীরণ হয়ে পেরিয়েছি মহা সিন্ধু।
রূপালী আভা গায়ে মেখে আমি ইলিশ হয়েছি পদ্মায়
আমি আবার বাজ পাখি হয়ে উড়েছি দারুন স্পর্ধায়।
পাহাড়ের সাথে পাথর হয়েছি পানি হয়ে মিশি নদীতে
আধার হয়েছি যামিনীর আমি মিশেছি পথের ধুলিতে
দুখেতে আমি অশ্রু হয়েছি সুখেতে হয়েছি হাসি,
চোখের জল বা মুখের হাসি দুটোকেই আমি খুব ভালবাসি।
ভুবন ভরিয়া প্রেম ছড়িয়েছি হয়ে শ্যামের বাঁশরি
এজিদ হয়ে কারবালাকে রাঙিয়েছে মোর তরবারি।
লক্ষ্মি কিংবা দূর্গা হয়েই বসুধা কে আমি গড়েছি
আমিই আবার কালী হয়ে অসুরকে বধ করেছি।
আমার মাঝেই জন্ম রয়েছে আমার মাঝেই মৃত্যু রয়
আমার জন্ম আমার মৃত্যু আমার মাঝেই হয়।
ভুলে নিজের কক্ষপথ ভাসছি ভুতুড়ে ব্রক্ষ্মাণ্ডে
আমিই একটা পৃথিবী এখন আমার মনের প্রকাণ্ডে।